আবু মুসলিম খাওলানী রহ: এর মর্মান্তিক কাহিনী



তার আসল নাম আব্দুল্লাহ ইবনে সাওব। অনেকে তাকে সাহাবী বলেছেন। আল্লামা তকি উসমানী দা. রা. তাকে সাহাবী বলেননি। আবু মুসলিম (রহ.) ছিলেন দৃঢ়চেতা মনোভাবের অধিকারী। জিহাদের নেশায় ডুবে থাকতেন। নবীজির সহবত লাভ করতে পারেননি। এই ছিলো তার জীবনেতিহাসের সর্বপেক্ষা বড় কষ্ট। বাড়ী ছিলো ইয়ামানে। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর শেষ জমানায় ইয়ামানে আসওয়াদ আনাসি নামে এক ভ-নবীর আর্বিভাব ঘটে। সেই ভন্ড নবী আবু মুসলিম খাওলানীকে ডেকে পাঠায়। তাকে জিজ্ঞেস করে তুমি আমাকে নবী মান? আবু মুসলিম এর সোজা উত্তর- মুহাম্মদ (সা.) ব্যতীত অন্য কাউকে নবী মানিনা। একথা বলেই চুপ হলেন না’ সাহসের পাহাড় আবু মুসলিম খাওলানী (রহ.)। আরো দু’কথা শুনিয়ে দিলেন গরম ভাষায়; মুহাম্মদ ছাড়া যে নবী দাবি করবে তার সাথে আমার ফয়সালা হবে তরবারির মাধ্যমে। একথা শুনে আসওয়াদ আনাসী গরম তেলে মাছ ভাজার মতোই ছ্যাত করে উঠলো। লোকবল দিয়ে আবু মুসলিমকে (রহ.) বেঁধে ফেললো। অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য একটি বিশাল অগ্নিকু- তৈরি করলো। আবু মুসলিম (রহ.) কে তাতে নিক্ষেপ করা হল। কিন্তু কুদরতের কারিশমা বুঝা বড় দায়!
নবীপ্রেমিক আল্লাহর ওলি খাওলানী রহ. দীর্ঘ সময় আগুনে থাকার পরও আগুন তার লোমও স্পর্শ করেনি। সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় আগুন থেকে বেড়িয়ে আসেন। এমন আজিব কা- দেখে ভ-নবী আসওয়াদ আনাসী নিজেও ভড়কে গেলো। তার অনুসারিদের মাঝেও স্পষ্ট হয়ে গেলো কে ভ-নবী আর কে সত্যনবী! অবস্থা বেগতিক দেখে আবু মুসলিমকে দেশত্যাগে বাধ্য করে ওই ভ-নবী।
খাওলানী রহ. ইয়ামন ছেড়ে মদীনার পথ ধরেন। চোখে মুখে নবীজির সাক্ষাতের আকুলতা। যখন তিনি মদীনায় প্রবেশ করবে ঠিক এই মুহূর্তে দরবারে আলাতে হাজিরা দিতে ইহধাম ত্যাগ করেন হুজুর আকরাম (সা.)। প্রেমিক খাওলানী মদীনার আকাশে তাকিয়েই বুঝে নিলেন এই পৃথিবীতে মুহাম্মদ নেই। আকাশ বাতাস কেমন যেন বিরহী যাতনায় নীরব নিশ্চুপ। বিরহ ব্যথা বুকে চেপে ধরেই মদীনায় ঢুকলেন খাওলানী (রহ.)। পৃথিবীকে দেখালেন না ভিতরে তার কেমন ক্ষত আর ক্ষরণ সৃষ্টি হয়েছে। ঘোড়াটা বাঁধলেন মসজিদে নববীর আঙ্গিনায়। মসজিদে প্রবেশ করে নামাযে দাঁড়ালেন। খুটির আড়াল থেকে ওমর ইবনুল খাত্তাব বিষয়টি দেখলেন। অসময়ে মসজিদে কে? ওমর ইবনুল খাত্তাবের ভিতরে প্রশ্ন। নামাযান্তে পরিচয় জানতে চাইলেন। আবু মুসলিম বললেন- আমি ইয়ামন থেকে এসেছি। ওমর আরো জানতে চাইলেন ভন্ড নবী আসওয়াদ আনাসী আমাদের এক ভাইকে আগুনে নিক্ষেপ করেছে। তার কিছুই হয়নি। পরবর্তিতে আসওয়াদ আনাসী তার সাথে কী রূপ ব্যবহার করেছে? খাওলানী উত্তর করেলেন, হ্যাঁ তার নাম আব্দুল্লাহ ইবনে সাওব।
এতোক্ষণে ওমর ইবনুল খাত্তাব গভীর ঈমানি দৃষ্টির জালে আটক গেছে খাওলানী। ওমর ইবনুল খাত্তাব বললেন- আমি আপনাকে কসম করে বলছি আপনি কী সেই লোক? জ্বী, হ্যাঁ। খাওলানীর ছোট্ট জবাব।
হযরত আবু মুসলিম খাওলানী রহ. ছিলেন দুনিয়া বিমুখ এক আবেদ কামিল মানুষ। এই মুসলিম মহামনীষির শেষ জীবন সিরিয়াতে কাটিয়েছেন। সিরিয়ার দারিয়া এলাকায় তার কবর রয়েছে।

0 Comments